পুরাণ। চলচ্চিত্র ইতিহাসের পুরাণ।
মিথ এবং স্মৃতির নাক্ষত্রিক অনুরণন স্টার ওয়ার্স। সহজ, সুন্দর, রহস্যময়, উত্তেজনায় ভরপুর। সোজা ভাষায় কথা বলে এবং মনের ভেতরে স্থায়ী জায়গা করে নেয়। লুকাস সৃষ্টি করেছেন নিজের খেয়ালের এক খেলাঘর। যেখানে ভালো এবং মন্দের চিরন্তন লড়াই পরতে পরতে ব্যাপ্ত; হোকনা তা বিনোদনের মোড়কে। নক্ষত্র যুদ্ধের দার্শনিক ভীত দৃঢ় , যদিও তা বিনোদনকে ছাপিয়ে ওঠার আপ্রান চেষ্টা চালায় না, বরং সৌম্য নীরবতায় মিশে থাকে গোটা সিনেমায়।
কুরোসাওয়া নামের এক যাদুকরের হাতে চলচ্চিত্রের আকাশে জন্ম নিয়েছিল হিডেন ফোর্ট্রেস আর ইয়োজিম্বো এর মত ছায়াপথেরা;আর সেই ছায়াপথের সন্তান-নক্ষত্র হিসেবে আমরা পেয়েছি সার্জিও লিওনের ভালো মন্দ ও কুৎসিতের আখ্যান। আর সেই আখ্যানের আরেক নাম লুকাসের স্টার ওয়ার্স। তবে কিনা কুরোসাওয়ার চরিত্রদের মাঝে রক্ত-মাংস ব্যাপারটা বেশ জান্তব, জীবন্ত; লিওনের ক্ষেত্রেও বলা যায় সে কথা, যদিও তাঁর চরিত্ররা পৌরাণিক নায়ক ও শয়তানের আবর্তে অনেক স্বচ্ছন্দ। সেদিক থেকে লুকাসের চরিত্ররা অনেক অনেক স্বপ্নিল ও রঙ্গিন; সাদাকালো বাস্তবতা তাদের মাঝে পরোক্ষ নয়।
আমেরিকান কালচারের এক নিরবিচ্ছিন্ন অংশ এই সৃষ্টি। আজ ২০১৪ তে আমি, বাংলাদেশের এক চলচ্চিত্র-প্রেমিক যে আনন্দ পেলাম, তা ১৯৭৭ এ প্রতিটা আমেরিকান নাগরিক চেটে পুটে নিয়েছে। আর, সিকুয়েল-প্রিকুয়েল এর ধারণাকে বিশ্বব্যাপি ব্যাধির মত ছড়ানোর দায়টা লুকাস-স্পিলবার্গ কে নিতে হবে অথবা দিতে হবে; তা আমরা চাই বা না চাই । ব্যাক্তিগত সিনেমার দহন এ জল ঢেলে দেওয়া “জস”, “স্টার ওয়ার্স”, “ইন্ডিয়ানা জোন্স” এর নির্মাতাদের এই সিনেমা গুলোও কিন্তু কম ব্যাক্তিগত নয়। তবে, হলিউড বাণিজ্য বোঝে, আর বুর্জোয়াদের দুনিয়ায় শিল্পের বাণিজ্যিক মুল্য দাড় করাবেনা হলিউড তাই কি হয়?
স্টার ওয়ার্সের নির্মানশৈলিকে তুলনা করা হয়েছে কুব্রিকের স্পেস অডিসি এর সাথে। এ ট্রিপ টু মুনের চারাগাছ বড় হয়েছে কুব্রিক আর লুকাসের হাতে। যদিও আজ স্পেশাল এফেক্টসের- “নট ভেরি স্পেশাল” নমুনা বিরল নয়। তবে কিনা কুব্রিক যেখানে বৌদ্ধিক নির্বান তাড়িত, লুকাস তথায় সাবলিল কৈশরিক উচ্চারনে আগ্রহী। স্টার ওয়ার্স তাই স্বকীয়তা ও শিকড়ের দরুন উপভোগ্য ও গুরুত্বপুর্ন হয়ে ওঠে; গিমিকের অপবাদ এড়িয়ে টিকে থাকে অনবদ্য নিজস্বতায়।
– সাব্বির পারভেজ সোহান।
Cinema Stalker 